আন্দুল স্টেশন থেকে বাড়ি ফেরবার পথে গাছটা চোখে পড়লো। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে একটা গাছ; পাতা নেই, ফুল নেইশুধু ফল। গাছ থেকে পাখির কিচমিচ কানে আসতেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। গাছ ভর্তি থোকা থোকা আঙুরের মত লাল রঙের ফলের লোভে ঝাঁক ঝাঁক বুলবুলি, সিপাহী বুলবুলি মহা শোরগোল লাগিয়েছেফল খাচ্ছে। তবে শুধু বুলবুলি নয়, টাটকা ফলের ব্রেকফাস্টে নিমন্ত্রিত : ফিঙে, শালিক, কাঠ শালিক, কাক, বসন্তবৌরী এমনকি বেনে বউ। গাছটা দেখতে পেয়ে না দাঁড়িয়ে উপায় আছে?

গাছের তলায় রাস্তার ওপর লাল রঙের ফল লাল গালিচা হয়ে বিছিয়ে রয়েছে। ফলগুলো দেখে আমারও ভারী ইচ্ছে হলো খেয়ে দেখি। একটা ফল হাতে তুলে নিলাম। ওমা! যেই একটু চাপ দিয়েছি অমনি বোকা হয়ে গেলাম। শাঁস একটুও নেই, হাওয়া বেরিয়ে এলো। আরো একটা ফল তুলে নিলাম, আরো একটা.. আরো একটা! একটা ফলেও শাঁস নেই! কিরকম হলো? তারমানে ফলের শাঁসটা খেয়ে নিয়ে শুধু খোসাটুকু পাখিতে ফেলে দিয়েছে। আমার তাহলে ফল খাবার কোনো উপায় নেই। ফল পেড়ে খেতে গিয়েও থমকে গেলাম, যদি বিষাক্ত হয়! তাহলে আমি জানবো কেমন করে ফলের স্বাদটা কেমন

ধাঁ করে মনে পড়ে গেলো পাখি খেলে নিশ্চয়ই মিষ্টি হবে খেতে। তবে বুলবুলিকে ঝাল ফল, যেমন লঙ্কাও খেতে দেখেছি। মুশকিলে পড়লাম। তাহলে উপায়

তবে একটা প্রশ্ন খুব ভাবাচ্ছিল আমাকে,পাখি ঝাল ফল খায় কেনো? ওদের কি ঝাল লাগেনা

গুগল আর ইউ টিউব করতে করতে জানলাম, লঙ্কায় এক ধরনের রাসায়নিক থাকে, নাম ক্যাপসাইসিন। যখন আমরা লঙ্কা খাই, তখন এটা আমাদের মুখে জ্বালার অনুভূতি তৈরি করে। গাছ হয়তো চায় না আমরা লঙ্কা খাই। কারণ আমরা (মূলত স্তন্যপায়ী) লঙ্কা খেলে লঙ্কা গাছের কোনো লাভ নেই। আমাদের পরিপাকতন্ত্র লঙ্কার বীজগুলোকে পুরো হজম করে ফেলে। বীজগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তাহলে গাছটার বংশবিস্তার হবে কেমন করে? মজাটা এইখানেই। লঙ্কা গাছের সাথে পাখির খুব ভাব। পাখি যখন লঙ্কা খায়, পাখির মুখে একটুও ঝাল লাগে না আর পাখির পরিপাকতন্ত্র লঙ্কার বীজ নষ্টও করে না। লঙ্কা গাছের বংশবিস্তার হতে কোনো বাধা নেই।

এখন আমি ফলের স্বাদটা বুঝি কীভাবে? এদিকওদিক তাকাতেই নজরে এলো গাছের তলায় সার দিয়ে পিঁপড়ে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো কালচে বাদামি রঙের পিঁপড়েগুলো আন্দাজ সেন্টিমিটার লম্বা। এরা এখানে কী করছে? একটুখানি লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারলাম ওপর থেকে যে ফলগুলো পাখি খেয়ে ফেলছে সেগুলো ঘিরেই পিঁপড়ের ভোজ লেগেছে। পিঁপড়ে টক, ঝাল, তেতো খায় না, খায় শুধু মিষ্টি! ফলটা তাহলে মিষ্টি খেতে! পরে খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম গাছটার বাংলা নাম জিওল, Indian Ash Tree. 


উৎস: ইউ টিউব চ্যানেল – INKtalks, “Shannon Olsson: Listen to nature’s language” and Wikipedia.
Photos by Nibedita Ghosh
About the author: নিবেদিতা ঘোষ, পেশায় স্কুল শিক্ষিকা হলেও নেশায় প্রকৃতি পড়ুয়া। পড়ানোর পাশাপাশি স্কুল পড়ুয়াদের শেখান গোয়েন্দা সেজে প্রকৃতির কেয়ারটেকার হয়ে পাহারাদার হতে।